রবিবার, ১৬ Jun ২০২৪, ০৪:৫৭ অপরাহ্ন

কে হচ্ছেন বঙ্গভবনের পরবর্তী বাসিন্দা

কে হচ্ছেন বঙ্গভবনের পরবর্তী বাসিন্দা

স্বদেশ ডেস্ক:

সংবিধান অনুসারে আগামী এক মাসের মধ্যেই নতুন রাষ্ট্রপতি পেতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার কারণে বর্তমান রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের তৃতীয় মেয়াদে দায়িত্ব পালনের সুযোগ নেই। কে হচ্ছেন আবদুল হামিদের উত্তরসূরি- এ নিয়ে চলছে জোর আলোচনা। দেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে আলোচনায় রয়েছেন বেশ কয়েকজন। এর মধ্যে বর্তমান স্পিকার, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও একজন সাবেক আমলার নাম বেশি শোনা যাচ্ছে। যদিও সরকারের সর্বোচ্চ মহল থেকে কোনো সিদ্ধান্ত জানানো হয়নি। সরকারপ্রধান এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন বলে জানা গেছে।

সংবিধানের ৫০ (২) ধারা অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তি ২ মেয়াদের বেশি রাষ্ট্রপতি পদে অধিষ্ঠিত থাকতে পারবেন না। এই ২ মেয়াদ পরপরও হতে পারে, আবার ২ মেয়াদের মাঝে সময়ের ব্যবধানও থাকতে পারে।

আবদুল হামিদ দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে দীর্ঘদিন ধরে রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০১৩ সালের ১৪ মার্চ তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান সিঙ্গাপুরের এক হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে গেলে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পান আবদুল হামিদ। এর ৬ দিন পর জিল্লুর রহমান মারা যান। এরপর ২২ এপ্রিল বিনা আপত্তিতে প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হন আবদুল হামিদ। ২ দিন পর তিনি শপথ গ্রহণ করেন। ২০১৮ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি আবারও বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় পুনর্নির্বাচিত হন তিনি। দ্বিতীয় মেয়াদের শপথগ্রহণ করেন ২০১৮ সালের ২৪ এপ্রিল। সে হিসাব আগামী ২৩ এপ্রিল তার পাঁচ বছরের মেয়াদকাল শেষ হচ্ছে। সংবিধান অনুযায়ী, তাকে পুনর্নির্বাচিত করার কোনো সুযোগ নেই।

আবদুল হামিদের উত্তরসূরি হিসেবে ইতোমধ্যে ৫ জনের নাম আলোচনায় এসেছে। সূত্র জানিয়েছে, রাষ্ট্রপতি হিসেবে জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর নাম জোর আলোচনায় রয়েছে। রংপুর-৬ আসন থেকে নির্বাচিত শিরীন শারমিন ২০১৩ সালের এপ্রিলে জাতীয় সংসদের সবচেয়ে তরুণ স্পিকার নির্বাচিত হন। তিনি এখনো এ দায়িত্ব পালন করছেন। রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের আলোচনার সূত্রে ইতোমধ্যে সামাজিক গণমাধ্যমের তাকে অনেকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।

দলের একটি সূত্র জানিয়েছে, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য মসিউর রহমানের পরবর্তী রাষ্ট্রপতি হওয়ার বেশ সম্ভাবনা রয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিকবিষয়ক উপদেষ্টার দায়িত্ব পালনকারী মসিউর সব সময় বিভিন্ন সরকারি অনুষ্ঠানে সক্রিয় ভূমিকা পালন করলেও সম্প্রতি তাকে জনসম্মুখে খুব একটা দেখা যাচ্ছে না।

রাষ্ট্রপতির সম্ভাব্য তালিকায় এরপর এগিয়ে আছেন সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। তিনি দিনাজপুর-৪ আসনের এমপি। মাহমুদ আলী ২০০৮, ২০১৪ ও ২০১৮ সালে এই আসন থেকেই পরপর তিনবার এমপি নির্বাচিত হন। বর্তমানে তিনি অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি।

পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের নামও সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে আলোচনায় এসেছে। এ ছাড়া দেশের ১৯তম প্রধান বিচারপতি ও আইন কমিশনের চেয়ারম্যান এবিএম খায়রুল হক ও আওয়ামী লীগের টানা তিনবারের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের নামও রাষ্ট্রপতি পদে সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে আলোচিত হচ্ছে। যদিও ওবায়দুল কাদের সম্প্রতি জানিয়েছেন, রাষ্ট্রপতি হওয়ার যোগ্যতা এখনো তার হয়নি।

এ বিষয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক গত বুধবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, নির্বাচনের আগে অনেকের নামই শোনা যায় এবং অনেক ধরনের গুজব শোনা যায়। সংবিধান অনুযায়ী, বর্তমান রাষ্ট্রপতির ৫ বছরের মেয়াদ শেষ হওয়ার ৬০ থেকে ৯০ দিন আগে (পরবর্তী রাষ্ট্রপতির জন্য) নির্বাচনের আয়োজন করা হবে। মানুষ খুব শিগগিরই জানতে পারবে কে হবেন দেশের পরবর্তী রাষ্ট্রপতি।

জাতীয় সংসদে আওয়ামী লীগের একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকায় তাদের প্রার্থীর রাষ্ট্রপতি হওয়াটা এক রকম নিশ্চিত। কারণ রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন সংসদ সদস্যদের ভোটে।

রাষ্ট্রপতি নির্বাচন সম্পর্কে সংবিধানের ১২৩ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘রাষ্ট্রপতি পদের মেয়াদ অবসানের কারণে উক্ত পদ শূন্য হইলে অথবা মেয়াদ শেষ হইলে মেয়াদ সমাপ্তির তারিখের পূর্ববর্তী ৯০ থেকে ৬০ দিনের মধ্যে শূন্যপদ পূরণের জন্য নির্বাচন অনুষ্ঠিত হইবে।’ সে ক্ষেত্রে আগামী ২৪ জানুয়ারি থেকে আগামী ২২ ফেব্রুয়ারির মধ্যে নির্বাচন আয়োজন করতে হবে।

নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর গত রবিবার বলেন, রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের প্রক্রিয়া আমরা ইতোমধ্যে শুরু করে দিয়েছি। যথাসময়ে নির্বাচন হবে।

১৯৯১ সালের রাষ্ট্রপতি আইনের সপ্তম ধারায় বলা হয়েছে- নির্বাচনী কর্মকর্তা নির্ধারিত দিন, সময় ও স্থানে মনোনয়নপত্র পরীক্ষা করবেন। প্রার্থী একজন হলে এবং পরীক্ষায় তার মনোনয়নপত্র বৈধ বিবেচিত হলে কমিশন তাকে নির্বাচিত ঘোষণা করবে। তবে একাধিক প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বৈধ হলে নির্বাচনের জন্য তাদের নাম ঘোষণা করবে ইসি। একাধিক প্রার্থী হলে সংসদের অধিবেশন কক্ষে নির্বাচনী কর্মকর্তা ভোটের আয়োজন করবেন। নির্ধারিত ব্যালট পেপারে পছন্দের প্রার্থীর নাম লিখে সই দিয়ে তা জমা দেবেন সংসদ সদস্যরা।

ভোটের দিন গ্যালারিসহ সংসদকক্ষে প্রার্থী, ভোটার, ভোট নেওয়ায় সহায়তাকারী কর্মকর্তা ছাড়া সবার প্রবেশাধিকার নিয়ন্ত্রিত থাকবে। এর আগে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের জন্য নির্বাচন কমিশন ভোটার তালিকা চূড়ান্ত করবে। আর ভোট শেষে নির্বাচন কমিশনার প্রকাশ্যে ভোট গণনা করবেন। সর্বাধিক ভোটপ্রাপ্তকে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত ঘোষণা করা হবে। সমান ভোট পেলে প্রার্থীদের মধ্যে লটারির মাধ্যমে ফল নির্ধারণ করা হবে।

সংসদীয় গণতন্ত্র চালুর পর ১৯৯১ সালে একাধিক প্রার্থী হওয়ায় রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ভোট করতে হয়েছিল। পরে প্রতিবারই ক্ষমতাসীন দলের মনোনীত প্রার্থী বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়ে আসছেন। নিয়ম অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন সংসদ সদস্যদের ভোটে, আর প্রধান নির্বাচন কমিশনার তাতে নির্বাচনী কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত আসনসহ মোট আসন ৩৫০টি। আওয়ামী লীগের মোট আসন ৩০২টি, জাতীয় পার্টির ২৬টি, ওয়ার্কার্স পার্টির ৪টি, জাসদের ২টি, গণফোরামের ২টি, বিকল্পধারার ২টি, তরিকত ফেডারেশনের ১টি এবং জেপির ১টি আসন রয়েছে। এ ছাড়া স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য রয়েছেন তিনজন। বিএনপির সাতজন সংসদ সদস্য পদত্যাগ করায় এখন সংসদে দলটির কোনো প্রতিনিধিত্ব নেই।

সংসদে বিরোধী দল জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু বলেছেন, তারা রাষ্ট্রপতি পদে কোনো প্রার্থী দেবেন না। ফলে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রার্থীর দিকেই সবার নজর। যদিও আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্বের কাছ থেকে কোনো ইঙ্গিত নেই। দলের সভাপতি শেখ হাসিনা এখনো এ বিষয়টি নিয়ে কিছু বলেননি বলে জানা গেছে।

সবশেষ রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের তফসিল হয়েছিল ২০১৮ সালের ২৫ জানুয়ারি। সে সময় ১৮ ফেব্রুয়ারি ভোটের তারিখ থাকলেও প্রার্থী একজন থাকায় বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় ৬ ফেব্রুয়ারি দ্বিতীয় দফায় রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন মো. আবদুল হামিদ। চলতি মেয়াদেও একক প্রার্থী হলে ফেব্রুয়ারির শুরুতেই নতুন রাষ্ট্রপতি পাবে বাংলাদেশ। যদিও তিনি দায়িত্ব গ্রহণ করবেন বর্তমান রাষ্ট্রপতির মেয়াদ শেষে।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877